Monday, 8 May 2023

উত্তরবঙ্গের রাজশাহী সিটিতে কাউন্সিলর পদে লড়বেন তৃতীয় লিঙ্গের সাগরিকা:

উত্তরবঙ্গের রাজশাহী সিটিতে কাউন্সিলর পদে লড়বেন তৃতীয় লিঙ্গের সাগরিকা:

এম, শামসুল আলম।
 রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:

বাংলাদেশের সৌন্দর্যের প্রতীক উত্তরবঙ্গের রাজশাহী সিটিতে এবার সংরক্ষিত নারী আসনে কাউন্সিলর পদে লড়তে চলেছেন তৃতীয় লিঙ্গের সাগরিকা।

সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠির "সুলতানা আহমেদ" (সাগরিকা।)

সাগরিকার বাড়ী রাজশাহী নগরের শাহমখদুম থানাধীন শিল্পীপাড়া এলাকায়। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনি একজন।

তার বাবা মারা গেছেন। বর্তমানে মা-বোনের কাছেই থাকেন।

তার তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠির সান্বিদ্ধে থাকলেও- তিনি মাঝে-মধ্যে বাড়ীতে যান। মা-বোনের ভরণপোষণের দ্বায়ীত্ব পালন করছেন।

তিনি জোন-৭ ( ১৯, ২০ ও ২১) আসনে লড়বেন। ফরম উত্তোলনের সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন দিনের আলো হিজড়া সংঘের উপদেষ্টা শরীফ সুমন, বিভাগীয় হিজড়া গুরু রিনা খান, দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা ও কোষাধ্যক্ষ জুলি।

ফরম উত্তোলন শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় সাগরিকা বলেন; আমি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ায় নবম শ্রেণীতে ওঠার পরে আর স্কুলে টিকতে পারেনি। সহপাঠীদের নানা টিপ্পনির কারণে আমি স্কুল ছাড়তে বাধ্য হই। শুধু তাই নয়; সমাজের ও পারিপার্শ্বিক জনগণের লাগাতার অত্যাচার ও আমার পরিবারকে প্রতিনিয়ত হেয়প্রতিপন্ন করায় এক সময় আমাকে নিজ বাড়ী ও বাবা-মাকে ছাড়তে হয়েছে। এরপর শুরু হয় আমার সংগ্রামী জীবন!

আমার রয়েছে নানা তিক্ততা ও অভিজ্ঞতা! আমাদের মতো তৃতীয় লিঙ্গের সন্তানেরা অন্য কোন গ্রহের মানুষ নয়। আমরা এই পরিবার, সমাজ তথা দেশেরই নাগরিক। আমরাও কোন কোন বাবা-মায়ের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে এসেছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়; এক শ্রেণীর মানুষ আমাদেরকে মানুষ হিসেবে মানতে চায় না! অথচ সরকার আমাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারের এই স্বীকৃতি ও ভোটার হওয়ার কারণে আমি আজ অন্যান্যদের সাথে নির্চাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছি।

এজন্য আমি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

সমাজের সকল বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমি এখন জনগণের সেবা করতে চায়। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও যে স্বাভাবিক সকলের ন্যায় মানুষকে ভালবাসতে পারে এবং জনগণের সেবা করতে পারে- আমি তা পরোক্ষ ও প্রত্যাক্ষভাবে দেখানোর জন্যই সমাজ সেবায় আসতে চাচ্ছি। আর এই সুযোগটা করে দেয়ার জন্য অত্র ওয়ার্ডবাসীর নিকট দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করে চলেছি।

তিনি আরো বলেন; মূলতঃ সমাজের নেতীবাচক দৃষ্টি পরিবর্তন করে- একটা ইতিবাচক প্ল্যাটফর্ম তৈরীর জন্য কাজ করে চলেছি। যেখানে দাঁড়িয়ে আমি জনসাধারণের ও আমার সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকারের কথা বলতে পারবো। মাঠপর্যায়ে প্রতিদিনই মানুষের সঙ্গে কথা বলছি নানা বিষয়ে। মানুষ ভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব চায়।

হিজড়াদের যোগাযোগ ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে অনেক গুণে বেশী। নারী কাউন্সিলররা রাত-বিরাতে চলতে পারেন না। পুরুষেরাও নারীদের নিয়ে কাজ করতে দ্বিধা-দ্বন্দে ভোগেন। কিন্তু হিজড়াদের বেড়ে ওঠাটাই অন্যদের থেকে আলাদা ও ভিন্ন।  তাই আমরা যেকোনো সময় যে কোন মানুষের বিপদ-আপদে দাঁড়াতে পারবো।

ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে সাগরিকা বলেন; ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নানা কথা ছড়াচ্ছেন।

তারা বলছেন; হিজড়া জনপ্রতিনিধি হলে সমাজে তাদের আরও অত্যাচার বেড়ে যাবে। অথচ হিজড়াদের সম্পর্কে আগে যে ভ্রান্ত ধ্যানধারণা ছিল; তা সামনে আনার চেষ্টা করে তার ইতিবাচক সমাধান করার প্রচেষ্টা  করছেন তাঁরা।

তবে জনগণ তাঁদেরও ভালোবাসতে শিখে গেছে।

অনেক জায়গায় তাঁদের সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধিরা ভালোভাবেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভালো কাজ করছেন। তিনিও সব বাঁধা অতিক্রম করে ভালো কাজ করবেন। আর এই সুযোগটা করে দেবেন অত্র ওয়ার্ড সমূহের ভোটারগণ; এটা তার দৃঢ় আত্মবিশ্বাস।