বিপুল মিয়া, জামালপুরঃ
কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন বিশেষতঃ শারিরীক পরিবর্তন তথা মাসিক সম্পর্কিত নিরবতা ভেঙে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নেতিবাচক সামাজিক নিয়মাবলীর পরিবর্তন করে কিশোরীদের মাসিক নিয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে ২ জুন রবিবার কুটামনি উচ্চ বিদ্যালয়,জামালপুরে দিনব্যাপি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মাসিক স্বাস্থ্য দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়‘Together for a #PeriodFriendlyWorld’ কিংবা‘ সবাই মিলে গড়ি মাসিক বান্ধব পৃথিবী ’বিষয়টিকে সামনে নিয়ে প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গল্প লেখা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।স্টল স্থাপন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনোদনের মাধ্যমে মাসিকের স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও প্রকাশনা প্রর্দর্শন করা হয়। শেষে অনুষ্ঠিত হয় মাসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা এর গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনা সভা,কুইজ প্রতিযোগিতা এবং মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব ও নাটক। প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাসিক নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন জনাব ডাঃ মোঃ আরিফ হোসেন, মেডিকেল অফিসার, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, জামালপুর। মূলতঃ মাসিক সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়া, মাসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, কিশোর-কিশোরী,নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে মাসিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা, মাসিক নিয়ে ভুল ধারনা ও সামাজিক কুসংস্কার দূর করা, মাসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সামাজিক পদক্ষেপ নেয়াকে উদ্বুদ্ধ করা এবং মাসিকের কারনে মেয়েরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিতকল্পে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসম্মত মাসিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ব্র্যাক অধিকার এখানে এখনই প্রকল্প এ বছর মাসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন করছে।
ব্র্যাক অধিকার এখানে এখনই প্রকল্প, জামালপুর আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মো: আলী আমজাদ দপ্তরী, উপ পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, জামালপুর, মোঃ মাজেদুর রহমান, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার, সদর ,জামালপুর, ডাঃ মোঃ আরিফ হোসের, মেডিকেল অফিসার,মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, জামালপুর, মোছাঃ মাহিনুর সিদ্দিকা, এরিয়া কো-অর্ডিনেটর এফপিএবি এনজিও, জামালপুর স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক বিপুল বিশ্বাস। মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থানায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা বলেন- মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা শুধু যার মাসিক হয় তার একার দায়িত্ব নয়। এর সুষ্ঠ ব্যবস্থপনার দায়িত্ব পরিবারের, বিদ্যালয়ের,সমাজের ও রাষ্ট্রের। মাসিকের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনায় সকলকে ভুমিকা নিতে হবে। তাহলেই সমাজ থেকে মাসিক নিয়ে কুঃসংস্কার দুর হবে। সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার দ্বার উন্মোচিতহবে।
অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইউপি সদস্য মোঃ শাহিন মিয়া বলেন, সময় হয়েছে, মাসিক নিয়ে এখন কথা বলতে হবে। মাসিক লুকোচুরির বিষয় নয়। আমার মাস মাসিক হয়েছিল বলেই আমার জন্ম হয়েছে, আমার মা মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছে।আজকে আমি এখানে এসে কথা বলতে পারছি।এটি একজন মেয়ের স্বাস্থ্যের বিষয়। অন্যান্য স্বাস্থ্যর খোঁজ আমরা যেভাবে নিই আজ থেকে আমার মেয়ের মাসিকের যত্নও সেভাবেইনেব।
বিদ্যালয়গুলোর বাজেট স্বল্পতা এবং জনবল স্বল্পতার কারনে হাইজেনিক টয়লেট ও স্বাস্থ্যকর মসিক ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয়না বলে মোঃ খুরশিদ আলম ,প্রধান শিক্ষক, কুটামনি উচ্চ বিদ্যালয় সভায় উল্লেখ করেন। তবে এখন থেকে আমার বিদ্যালয় আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আমরা সেনেটারি প্যাডের সুব্যবস্থা করব, যাতে কোন মেয়েকে মাসিকের সময় প্যাডের অভাবে বিদ্যালয়ে আসা থেকে বিরত থাকতে না হয়। তিনি আরো বলেন শিক্ষক স্বল্পতার কারনে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা পাঠদানও ব্যহত হচ্ছে। তবে আজকের এই অনুষ্ঠান এবং কুইজ সেশন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ের যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য অধ্যায় গুলি পাঠদানে সহায়ক হবে এবং আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরাও আজকে তাদের পাঠের অনেক অংশ এখান থেকে কাভার করে নিতে পারলো। এরকম অনুষ্ঠান যদি আরো আগে করা যেত বা অন্যান্য সংস্থাও আমাদের বিদ্যালয়ে করে, তাহলে শিক্ষক স্বল্পতা আমাদের জন্য কোন বিষয় হবে না, ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পাঠ্যপুস্তকের নলেজ এ ধরনের অনুষ্ঠান থেকেই পেয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি বলেন-মাসিক মেয়েদের জীবণের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি হওয়াই স্বাভাবিক। না হওয়াটাই অস্বাভাবিক।একজন সচেতন মানুষ হিসাবে আমার এই বিদ্যালয় সহ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের জন্য চেঞ্জিং রুম ও স্যানিটারী প্যাডের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করবো।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বলেন- মাসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে আমরা অঙ্গিকারাবদ্ধ। বাজেট স্বল্পতার কারনে সব সময় সকল সেবা যথাযথভাবে প্রদান করা সম্ভব হয় না। এজন্য বিদ্যালয়গুলো যদি নিজেরা বাজেটের সংস্থান করে তাহলে সকল কিশোরীর জন্য মাসিকের মানসম্মত সেবা সম্ভব হবে।
উপ-পরিচালক পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়, জামালপুর বলেন, আজকের কিশোরীদের সুস্থ্যতার উপর নির্ভর করছে আগামী দিনের সাফল্য। তাদের পিছনে বিনিয়োগ মানেই জাতির উন্নয়নে বিনিয়োগ। মাসিক একটা কিশোরীর জীবনে স্বাভাবিক ভাবেই আসে। কিন্তু আমরা সমাজ এটাকে অস্বাভাবিক করে ফেলি। এই ধরনের অনুষ্ঠান মাসিক নিয়ে সামাজিক কুসংস্কার দূর করতে সাহায্য করবে। আজকে ব্র্যাক অধিকার এখানে এখনই প্রকল্পের মতো আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে, মাসিক নিয়ে কথা বলতে হবে।
অধিকারএখানে, এখনই প্রকল্পের আয়োজনে ইয়ুথ মোঃ জিল্লুর রহমান শান্তর এর স্বাগত বক্তব্যর মধ্য দিয়ে দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ জিল্লুর রহমান।অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সহায়তা করেন কাকলি আক্তার, জেলা ইয়ুথ মবিলাইজার,জামালপুর এবং বিভিন্ন ইয়ুথ গ্রুপের সদস্য , বৃষ্টি বিথি,সুমুইয়া,ফয়সালসহ অন্।