শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে
মোঃ জয় হোসাইন
সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, পৌরসভাসহ আটটি ইউনিয়নের সর্বময় ক্ষমতার মালিক ছিলেন সরিষাবাড়ী পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক রাজু আহমেদ৷ তার নেতৃত্বে সরিষাবাড়ী উপজেলায় সরকারি বরাদ্দের হরিলুট, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি হয়েছে । দলের শীর্ষ নেতাদের ছায়া থাকায় থানা পুলিশও তার কথা শুনতে বাধ্য হয়। এ উপজেলায় ১৭ বছরে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের। কাগজ কলমে বাস্তবায়ন দেখিয়ে চেক গুলো উত্তোলন করে সমস্ত টাকা ভাগ ভাটোয়ারা করতেন রাজু ডিলার৷
জানা যায়, এক সময় তেল-নুন কেনারও পয়সা ছিল না তার। বসবাস করতেন টিনসেট ঘরে।
ছিলেন আরামনগর বাজার এলাকার রফিক ডিলার এর কর্মচারী৷ তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাতারাতি পাল্টে যায় তার দিন। শুরু করেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের চাল গম কেনার ব্যবসা৷ সে সময়ে আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ সংগঠনের কোথাও কোনো পদ-পদবি না থাকলেও ডা: মুরাদের সাথে শুরু করে যোগাযোগ। সেই থেকেই তার ব্যবসা শুরু৷ ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির আমলে মামুনুর রশিদ জোয়ার্দার এর ভাই এনামুল হকের সাথে শুরু করে বিশেষ ও সাধারন বরাদ্দে হরিলুট । ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরের ১ম থেকে ২য় পর্যায় থেকে চলমান অর্থ বছরের বরাদ্দ গুলো তিনিই নিয়ন্ত্রণ করতেন৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-নির্বাচনী এলাকা-প্রথম পর্যায়) সোলার হোম সিস্টেম খাতে ২৩ হাজার ৬৬০ টাকা মূল্যের ৬০ ডব্লিউপি অনুকূলে ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলার পোগলদিঘায় ১৮৪টি, কামরাবাদে ১৬টি, আওনায় ১৩টি ও মহাদান ইউনিয়নের নামে ছয়টি সোলার বরাদ্দ দেওয়া হলেও দীর্ঘ আজ পর্যন্ত তারা কেউ সোলারই পায়নি। ২০১৯ ও ২০২০ সালে পিআইও অফিসের বরাদ্দকৃত টিআর, জিআর, কাবিখা প্রকল্পগুলো তার পছন্দ মতো নাম-তালিকা করা হয়েছে। যার ২০ ভাগও বাস্তবায়ন হয়নি। অতিদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪০ দিনের কর্মসংস্থান (ইজিপিপি) কর্মসূচির দুই কোটি ৫৯ লাখ টাকার সিংহভাগ হরিলুট করা হয়েছে তারই নেতৃত্বে। করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণের প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ প্রায় ৫০ লাখ টাকা এবং ভিজিএফ প্রকল্পের ২০২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত সহায়তাগুলো লোক দেখানো কিছু বিতরণ করা হলেও সিংহভাগ চাল গুদাম থেকেই উধাও হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৪ বছর তার নেতৃত্বে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও কর্মকর্তাদের সাথে কাগজে কলমে বাস্তবায়ন দেখিয়ে সম্পুর্ন টাকা হরিলুট করা হয়েছে। প্রকল্প কমিটিতে যাদের নাম কমিটিতে থাকতো তারাও কখনো প্রকল্পের টাকার চেক হাতে পায়নি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি সরিষাবাড়ী উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলে আবারো পুনরায় আগের রুপে চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, অতীতে রাজু ভাই সরিষাবাড়ীর প্রায় দপ্তর গুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন৷ যেখানে যা বরাদ্দ আসত তিনি নিজেই রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় ভাগ ভাটোয়ারা করত৷ ১৭ বছরের উন্নয়নের বরাদ্দের তালিকা বের খোজ খবর নিলে রাজুর নেতৃত্বে দুর্নীতি হওয়া প্রায় ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা উদ্ধার হবে৷ আমরা তদন্তের দাবী জানাই।
এ বিষয়ে রাজু আহমেদকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করে দৈনিক জামালপুর দিনকাল পত্রিকার সাংবাদিক জয় হোসাইন কে মামলা দেওয়ার ভয় দেখা।
তবে কথা হলে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শওকত জামিল জানান,আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। রাজু সাহেবের নাম শুনেছি। আমার সাথে কখনো কথা হয়নি৷ আগস্টের ৫ তারিখের পর তিনি উপজেলায় আসেনি। আমি যতদিন আছি ততদিন কোন অন্যায় বা অনিয়ম পশ্রয় দেওয়া হবে না।